উৎস ছাড়াই জ্বলে উঠছে আগুন
  • 3 years ago
সকাল, দুপুর বা সন্ধ্যায় ঘরের ভেতরে-বাইরে, যেখানে-সেখানে জ্বলে উঠছে আগুন। হঠাৎ জ্বলে ওঠা এ আগুনে পুড়ছে খড়ের গাদা, ঘরের ভেতরের আসবাব, বিছানা, খাদ্যশস্যের বস্তা এমনকি পোশাকপরিচ্ছদও।
আগুনের উৎস খুঁজে বের করতে রাত-দিন চলছে পাহারা। লেগে যাওয়া আগুন সহজে নেভানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি পানির পাম্প। উঠানে উঠানে নানা পাত্রে জমিয়ে রাখা হয়েছে পানি। চিত্রটি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের।
কয়েক দিন ধরে এমন আগুন আতঙ্কে আছেন ওই গ্রামের লোকজন। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গ্রামে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারছেন না।
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিন ওই গ্রামে দেখা গেছে, এখানে-ওখানে মানুষের জটলা। নারী ও শিশুরা ঘরের বারান্দায় বসে আছে। পাশেই কাপড়চোপড়ের স্তূপ। আর উঠানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আধপোড়া বালিশ, তোশক ও নানা কাপড়। বাড়ির উঠানে পাতিল ও বালতিতে জমিয়ে রাখা হয়েছে পানি।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ২৫ দিন আগে হঠাৎই দিনের বেলায় গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের (৪৮) খড়ের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভান। সে সময় মো. সিরাজউদ্দিনের (৬৫) বাড়িতে খড় সংরক্ষণের ঘরে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেই আগুনও নেভান।
কয়েক দিন পর বাবুল হোসেন (৩৭) ও আবদুস সালামের (৩৮) বাড়ির খড়ে আগুন লাগে। এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৪১), মকসেদুল ইসলাম (৪১), মেরিনা বেগম (৪৬) ও মো. সাইফুল্লাহর (৩৬) মধ্যে কারও না কারও খড়ের গাদা, ঘরের বারান্দা ও ভেতরে থাকা খাট, তোশক, আলনা, আলনায় থাকা শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ও ঘরে রাখা গমের বস্তা, খাবারের কনটেইনারসহ আসবাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
মকসেদুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক ধরে চার-পাঁচটি পরিবারের মধ্যে কারও না কারও ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কখনো এক বাড়িতে একাধিকবার ঘটেছে। সব মিলিয়ে ৫০ বারের বেশি আগুন ধরার ঘটনা ঘটেছে। তবে তিন-চার দিন ধরে আগুন ধরার ঘটনা বেড়ে গেছে। গত শুক্র ও শনিবার আট-নয়বার আগুন ধরেছে। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঘটনা ঘটছে বেশি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামে হঠাৎ ধরা আগুন পুড়ে যাওয়া কাপড়চোপড়। ২৫ এপ্রিল, দুপুর পৌনে ১২টা ছবি: প্রথম আলো
আবদুল্লাহ আল মারুফ (১৯) বলেন, ‘রোববার সকাল ছয়টার দিকে দেলোয়ারের ঘরের বারান্দায় গুঁজে রাখা কয়েকটি দাওয়াত কার্ডে আগুন লাগে। সেই আগুন নেভানোর পর আমার ঘরের বিছানায় আগুন লাগে। পরে তিনি তাঁদের ঘরে পোড়া যাওয়া জিনিসপত্র দেখাতে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তিনি একটি খাবার রাখার কনটেইনার দেখিয়ে বলেন, এই কৌটার ভেতরে খাবার ছিল। তার মধ্যেও আগুন লেগেছে। তাঁর বাড়ির গমের বস্তা ও ড্রামের ভেতর আগুন লাগে।’
গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৫০) বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ার ভয়ে এসব বাড়ির কেউ ঘরের আলনায় কাপড় রাখছেন না। কয়েকবারের আগুনে তাঁর পরিবারের অনেকের শাড়ি, লুঙ্গি, জামা, তোশক পুড়ে গেছে।
Recommended